
রাষ্ট্র কি আজ অপরাধীদের রক্ষাকবচে পরিণত হয়েছে? এই প্রশ্ন আর তাত্ত্বিক নয়, এটি বাস্তব ও জ্বলন্ত। যখন একটি রাষ্ট্র অপরাধীকে নিরাপত্তা দেয়, দুর্নীতিবাজকে সংবর্ধনা দেয় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য পুরো প্রশাসনিক যন্ত্রকে সক্রিয় করে তোলে—তখন সেই রাষ্ট্র আর নিরপেক্ষ থাকে না, সে নিজেই ন্যায়বিচার হত্যার অংশীদার হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা ঠিক সেই অন্ধকার মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
দেশের একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার আসামী এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার অভিযুক্ত—যিনি একসময় সেনাবাহিনীর কাছে মুচলেকা দিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি আর রাজনীতি করবেন না—আজ তিনি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান নন, কোনো সাংবিধানিক পদেও নেই। তবুও সরকার তাকে এসএসএফের নিরাপত্তা দিতে যাচ্ছে। এটি কেবল ক্ষমতার অপব্যবহার নয়, এটি রাষ্ট্রের নৈতিক দেউলিয়াপনার প্রকাশ।
এখানেই থেমে থাকেনি রাষ্ট্রীয় পক্ষপাত। অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুসারীদের সুবিধার জন্য টোল আদায় বন্ধ রাখা হচ্ছে, তিন স্তরের নিরাপত্তা দিয়ে সংবর্ধনার মঞ্চ প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র যেন জনগণের নিরাপত্তা, আইনের শাসন বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বদলে একজন বিতর্কিত রাজনীতিকের আরাম ও প্রভাব রক্ষায় ব্যস্ত।
যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান—যিনি ‘১০ শতাংশ কমিশন’ ও ‘দুর্নীতির বরপুত্র’ হিসেবে দেশের রাজনীতিতে কুখ্যাত। দুর্নীতি, সহিংসতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে যাঁর নাম বারবার উঠে এসেছে, তাঁকেই আজ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার ছত্রছায়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। এটি আইনের শাসনের প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা এবং বিচারব্যবস্থার মুখে চপেটাঘাত।
একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি যখন এসএসএফ প্রটেকশন পায় এবং একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজকে সরকার আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেয়, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়—আইন এখানে সবার জন্য সমান নয়। ক্ষমতাবানদের জন্য আইন শিথিল, আর সাধারণ মানুষের জন্য কঠোর।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব অপরাধীকে রক্ষা করা নয়, অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা। আজ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হচ্ছে, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেখাচ্ছে—এ দেশে অপরাধ করলে শাস্তি নয়, বরং ক্ষমতার ছায়ায় পুরস্কার মেলে। ইতিহাস এই বিশ্বাসঘাতকতা ক্ষমা করে না। আজ যারা ন্যায়বিচারকে হত্যা করছে, কাল তারাই ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াবে।